তমাল আজও সেই একলা সন্ধ্যাগুলোর মুখোমুখি হয়। কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ, মলিন চেহারা নিয়ে প্রতিদিনের মতো হাঁটছে শহরের চেনা রাস্তায়। আকাশের মেঘের ভার যেন তার বুকের ভারের মতোই। মনে হচ্ছে যেন কিছু একটা নেই, কিছু একটা সবসময়ই হারিয়ে গেছে—তিথি।
তমাল আজও সেই একলা সন্ধ্যাগুলোর মুখোমুখি হয়। কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ, মলিন চেহারা নিয়ে প্রতিদিনের মতো হাঁটছে শহরের চেনা রাস্তায়। আকাশের মেঘের ভার যেন তার বুকের ভারের মতোই। মনে হচ্ছে যেন কিছু একটা নেই, কিছু একটা সবসময়ই হারিয়ে গেছে—তিথি।
তিথির সাথে তমালের পরিচয় ছিল একদম আকস্মিক। এক শীতের সকালে শহরের বইমেলায় তাদের প্রথম দেখা। দুজনই বইয়ের পাগল, আর এই ভালোবাসাটাই ছিল তাদের মিলনের প্রধান কারণ। প্রথমে চোখের দেখা, তারপর হালকা কথা—এভাবেই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে তাদের সম্পর্ক।
সেই শীতের দিনগুলো, যখন তমাল আর তিথি হাতে হাত রেখে শহরের রাস্তায় হাঁটত, কফি শপে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করত, তখন তাদের পৃথিবীটা ছিল শুধু তাদের দুজনের। তমাল ভাবত, তিথির মতো একজনকে পেয়ে সে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান মানুষ। তাদের প্রতিটি দিনের আড্ডা, হাসি আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন একেকটি মূল্যবান স্মৃতি হয়ে তার মনে গেঁথে থাকত।
কিন্তু সময় সবকিছু বদলে দেয়। তিথির চাকরির কারণে তারা দুজনেই ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তিথির কাজের চাপ, একটার পর একটা প্রজেক্ট—সবকিছুই যেন তাদের দূরত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছিল। তমাল অনুভব করছিল, তিথি ধীরে ধীরে তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই সে এই ফাঁকটা পূরণ করতে পারছিল না।
এক সন্ধ্যায় তিথি তমালের সাথে দেখা করল, তাদের প্রিয় কফি শপে। সেদিন তিথির চোখে ছিল এক ধরনের অস্থিরতা, যা তমাল আগে কখনো দেখেনি। তিথি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, "তমাল, আমাদের সম্পর্কটা আগের মতো নেই। আমি আর পারছি না।"
তমাল থমকে গেল। তার হৃদয়টা যেন মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে পড়ল। সে কিছু বলতে পারল না, কেবল হতবাক হয়ে তিথির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তিথি তাকে বলল, "আমার জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমাদের এই সম্পর্কটা আমি ধরে রাখতে পারছি না।"
তমালের মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হলো না। তার চোখের সামনে দিয়ে সবকিছু যেন ধোঁয়াশা হয়ে যাচ্ছিল। তিথি উঠে দাঁড়াল, একবারও পেছন ফিরে তাকাল না, এবং সেই মুহূর্তেই তমালের জীবন থেকে চিরদিনের মতো চলে গেল।
এরপর থেকে তমালের দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল নিঃসঙ্গতায়। তাদের একসাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত তমালকে আরও বেশি করে তিথির অভাবের কথা মনে করিয়ে দিত। প্রতিদিন সে সেই একই ক্যাফেতে যেত, যেখানে তারা দুজনে বসে কফি খেত আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখত। তিথির ছোঁয়া, তার হাসি, তার কথা—সবকিছুই এখন তমালের জন্য শুধু স্মৃতি।
তমাল বারবার চেষ্টা করেছে তিথির সাথে যোগাযোগ করার। হাজার বার মেসেজ করেছে, ফোন করেছে, কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি। একদিন বুঝতে পারল, তিথি সত্যিই আর ফিরে আসবে না। তার জীবন থেকে একেবারে হারিয়ে গেছে।
এখন তমাল প্রতিদিনের মতো সন্ধ্যায় বাইরে বেরিয়ে আসে, হাতে তিথির পছন্দের বইটা নিয়ে। সে একাই বসে থাকে সেই পুরনো ক্যাফেতে, কফির কাপে এক চুমুক দিয়ে স্মৃতির পাতায় হারিয়ে যায়। আজ তমালের জীবনে তিথি নেই, কিন্তু তিথির স্মৃতিগুলো প্রতিনিয়ত তার সাথে রয়েছে।
মাঝেমধ্যে তমাল আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে, যদি তিথি আবার ফিরে আসত! যদি সেই প্রথম দিনের মতো তাদের চোখ আবার একবার মিলত! কিন্তু তমাল জানে, বাস্তবতা আর তার কল্পনা এক নয়। তিথি এখন অন্য কোথাও, অন্য কারো জীবনে হয়তো সুখে আছে।
তবু তমালের হৃদয় সেই অপেক্ষাতেই থাকে। প্রতিদিনের মতো, সে আবারো সেই পুরনো রাস্তা ধরে হাঁটে, তিথির ছোঁয়া খোঁজে হাওয়ার প্রতিটি পরশে। কষ্টে মোড়ানো এই ভালোবাসা তার হৃদয়ে রয়ে গেছে, আর এই বিরহই এখন তার জীবনের একমাত্র সত্য।
ছবি কালেকশান: এআই টুলস থেকে
.............................................................
আরো পড়ুনঃ
0 Comments