বাংলাদেশে একসময় অল্প বয়সেই বিয়ে দেওয়ার প্রচলন ছিল। তখনও ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বয়স কম থাকত, পার্থক্য হতো ৫ থেকে ১০ বছর। তবে এখন দম্পতিদের বয়স সাধারণত কাছাকাছি হয়। তবুও ব্যতিক্রম আছে—কেউ কেউ দ্বিগুণ বয়সের সঙ্গীকেও বিয়ে করছেন।

কিন্তু এর ফলে সামাজিক ও আইনি চাপের মুখে পড়তে হয়—বলছেন বিশেষজ্ঞরা।




বয়সে বড় বিয়ে করার সামাজিক চ্যালেঞ্জ


সমালোচনা সামলে চলার মানসিকতা থাকতে হবে

  • বয়সের বেশি পার্থক্যের বিয়ে সমাজ ‘অস্বাভাবিক’ হিসেবে দেখে।

  • স্বামী বড় হলে স্ত্রীকে নিয়ে বলা হয়—“লোভে পড়ে বিয়ে করেছে”, “স্বামী কয় দিনই বা বাঁচবে।”

  • পুরুষের ক্ষেত্রে বলা হয়—“ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে” বা “খারাপ উদ্দেশ্য আছে।”

  • এসব নেতিবাচক মন্তব্য নারীদের মধ্যে বিষণ্নতা তৈরি করতে পারে।

  • পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের সমর্থন না পেলে চাপ আরও বেড়ে যায়।

  • দাম্পত্য জীবনে কোনো সমস্যা দেখা দিলে সমাজ তা বয়সের পার্থক্যের ওপর চাপিয়ে দেয়।


আইনি চ্যালেঞ্জ

আইনি দিকটাও ভেবে রাখুন

  • আমাদের প্রেক্ষাপটে বয়সের বেশি ব্যবধানের বিয়ে মানে সাধারণত স্বামীর বয়স বেশি। তখন প্রশ্ন আসে—এটা কি দ্বিতীয় বিয়ে? টাকার লোভে কি বিয়ে হলো?

  • মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর ৬ ধারামতে, দ্বিতীয় বিয়ের জন্য সালিসি পরিষদের অনুমতি বাধ্যতামূলক। অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে—

    • দেনমোহর অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে।

    • প্রথম স্ত্রী আদালতে মামলা করে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করতে পারবেন।

    • স্ত্রী আলাদা থাকলেও ভরণপোষণ দিতে হবে।

    • স্ত্রী ও সন্তানদের অধিকার খর্ব করা যাবে না।

  • অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে শাস্তি:

    • সর্বোচ্চ এক বছর জেল

    • সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা

    • অথবা উভয় দণ্ড।

  • অসম বয়সের বিয়েতে প্রায়ই প্রথম স্ত্রী বা সন্তানরা বিষয়টি মেনে নেন না। ফলে দেনমোহর, ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়।

  • কনে নাবালক হলে অভিভাবকরা অপহরণের মামলা করতেও পারেন।


বয়সের পার্থক্য আইনত কোনো অপরাধ নয়, তবে আইনি শর্ত ও সামাজিক মানসিক চাপ—দুটোই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দম্পতিকে টিকে থাকতে হলে পরিবার ও সমাজের সমর্থন, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়া জরুরি। অন্যদিকে, আইনি জটিলতা এড়াতে অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিয়ে নিবন্ধন ও প্রযোজ্য অনুমতি নিতে হবে।